ইসলামি আকিদা || Islamic Aqedah || Islamic Creed || Religious Matters
![]() |
১. ‘ইসলামি আকিদা’ বলতে কি বুঝ?
২.ইসলামী আকিদাহর মূল উপাদান বা ইসলামী বিশ্বাসের মৌলিক উপাদান গুলি কি কি?
৩. ‘ইসলামি আকিদা’ এর গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
# উপস্থাপনা:
‘ইসলামী আকীদা’ বিষয়ে জানতে আমাদের জ্ঞানের শহরে আপনাকে স্বাগতম। আমরা আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে তা হলো ‘ইসলামী আকীদা’।
# ইসলামি আকিদাহর পরিচয়:
সাধারণত, ইসলামী আকীদা বলতে ঐ সব মূল বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা ও মতবাদগুলিকে বোঝায়, যা কোন মুসলিমের বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করে। এটি কোন বিশ্বাসীর সাথে আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা, অদৃশ্য জগৎ এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্যে এই তিনটির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে। "আকিদা" (আরবি- العقيدة) একটি আরবি শব্দ। শব্দটি তার মূল শব্দ "আকদা" থেকে উৎকলিত। এর অর্থ দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করা বা আবদ্ধ করা। ‘আকিদা’ এমন চিন্তা-চেতনা বা ধ্যান-ধারণার নাম, যা একজন মুসলিমের অন্তরে বিশ্বাসের দৃঢ় এবং অটল প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটায়।
#ইসলামী আকিদাহর মূল উপাদান:
‘ইসলামী আকিদা’ ইমানের সাতটি ধারার (আরকান আল-ঈমান) উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যা নিম্নরুপ:
আল্লাহর একত্ববাদ ইসলামের মৌলিক নীতি। মুসলমানরা এটা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ হলেন এক এবং একমাত্র রব। তার কোন অংশীদার, সন্তান বা সমকক্ষ নেই। তিনি হলেন সকল সৃষ্টিার একমাত্র স্রষ্টা, পালনকর্তা এবং সবকিছুর উপর সার্বভৌম।
আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা ফেরেস্তাদের নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রয়েছে সর্বদা প্রভূর হুকুম-আহকাম মেনে চলা। আল্লাহর নির্দেশাবলী পালনের পাশাপাশি আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা তাদের উপর কিছু সুনি্র্দিষ্ট দায়িত্বও অর্পণ করেছেন, যা পালন করতে ফেরেস্তারা সর্বদা সচেষ্ট। যেমন- জিবরাইল (আ.) এর দায়িত্ব আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের (নবী ও রাসুল) নিকট ওহী নিয়ে আসা। আজরাইল (আ.) এর দায়িত্ব সৃষ্টিকুলের জান কবজ করা, ইস্রাফীল (আ.) এর দায়িত্ব আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ঠিক সময়মত সিংগায় ফুৎকার দেয়া, মিকাইল (আ.) এর দায়িত্ব প্রভূর হুকুম মোতাবের মেঘ পরিচালনা করা, মুনকার ও নকীর ফেরেস্তাদ্বয়ের দায়িত্ব কোন সৃষ্টিজীব মৃত্যূবরণ করলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, কিরামান কাতেবিন ফেরেস্তাদ্বয়ের দায়িত্ব সকল প্রাণীর কৃত আমল লিপিবদ্ধ করা।
মুসলিমরা তাদের পূর্ববর্তী সকল নবীদের উপর অবতীর্ণ ঐশ্বরিক গ্রন্থে বিশ্বাস করে। এরকম আসমানী গ্রন্থের সংখ্যা ১০৪ খানা (মতভেদ আছে)। যার মধ্যে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রয়েছে চারটি। যেমন- তাওরাত [ হযরত মূসা (আ.) এর উপর নাযিলকৃত আসমানী গ্রন্থ ], যাবুর [ হযরত দাউদ (আ.) এর উপর নাযিলকৃত আসমানী গ্রন্থ ], ইঞ্জিল [ হযরত ঈসা (আ.) এর উপর নাযিলকৃত আসমানী গ্রন্থ ] এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআন [হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর উপর নাযিলকৃত আসমানী গ্রন্থ ]। আর এগুলো ছিল চূড়ান্ত এবং পরিপূর্ণ ওহী।
মানবজাতিকে পথ দেখানোর জন্য আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা যুগে যুগে নবী ও রাসুলদের পাঠিয়েছেন। মুসলিমরা আদম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মদ ﷺ পর্যন্ত সকল নবী ও রাসুলদের উপর বিশ্বাস করে। তাঁরা সকলেই একেশ্বরবাদ এবং সৎ জীবনযাপনের বার্তা প্রচার করেছেন।
মুসলিমরা মৃত্যুর শেষ বিচারের দিবসের প্রতি ও সেদিনের জবাবদিহিতার প্রতি বিশ্বাস করে। প্রত্যেকের কৃত-কর্মের ভিত্তিতে আল্লাহ সেদিন বিচার করবেন এবং ফলাফল স্বরুপ জান্নাতে পুরস্কৃত করবেন অথবা জাহান্নামে শাস্তি দেবেন।
মুসলিমরা ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশুদ্ধ বিশ্বাস পোষন করে। বিশুদ্ধ বিশ্বাস বললাম এই কারণে যে, সকলেই ভাগ্যকে বিশ্বাস করলেও ভাগ্যের প্রতি সকলের বিশ্বাস বিশুদ্ধ নয়। বেশিরভাগ লোকেই মনে করেন যে, তাদের ভাগ্যে আছে তাই ঘটছে। আর তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা নিজে থেকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু এটি কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশুদ্ধ বিশ্বাস নয়। যদি তাই হতো, তবে সৃষ্টিজীবের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহকে দোষারোপ করা যেতো। অথচ কস্মিনকালেও এটি সম্ভব নয় যে কোন সৃষ্টিজীব আল্লাহকে দোষারোপ করবে। যদি কেউ এমন করে থাকে তবে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে সঠিকটা কি? সঠিকটা হচ্ছে- প্রত্যেক সৃষ্টিজীব কে তার সৃষ্টির ধরণ অনুযায়ী জ্ঞান ও বুদ্ধি দেয়া হয়েছে। এবার সেই সকল সৃষ্টিজীবকে তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিচরণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে সৃষ্টির মুক্তবাতাসে ছেড়ে দিলে তারা তাদের জীবদ্দশায় কি কি করবেন, তা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা পূর্ব থেকেই জ্ঞাত আছেন। আর তিনি জ্ঞাত আছেন বলেই তা সৃষ্টিজীবের ভাগ্যলিপিতে লিখে রেখেছেন। আর এজন্যই ভাগ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
যা সুনির্ধারিত। যেমন- কোন সৃষ্টিজীবের কখন জন্ম হবে, কখন মৃত্যূ হবে, তার হায়াত কত নির্ধারিত হবে, ইত্যাদি। এগুলিও মহান আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার ইচ্ছা, জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের অধীন।
যা ঝুলন্ত। যাকে আমরা ইংরেজিতে বলতে পারি পেন্ডিং। এটি মানুষ তার দোয়া, প্রার্থনা ও কৃতকর্মের দ্বারা পরিবর্তন করতে পারে। তবে এই দোয়া, প্রার্থনা ও কৃতকর্মেরা দ্বারা পরিবর্তনের বিষয়টিও তার জ্ঞানের অধীন। তিনি পূর্ব থেকেই জানতেন এসব পরিবর্তনের কথা। আর তাই তিনি ভাগ্যলিপিতে সেভাবেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
তাক্বদীরের প্রতি ঈমানের সারকথা হচ্ছে- তিনি নিজে থেকে নির্ধারণ করে লিখে রেখেছেন বলে আমাদের জীবনে ঘটছে এমন নয়। বরং আমাদের স্বাধীনভাবে মুক্তবাতাসে ছেড়ে দেয়া হলে আমরা যা করতাম, তা তিনি পূর্ব থেকেই জানেন আর তাই তিঁনি লিখে রেখেছেন এবং আমাদের বাস্তবজীবনে ঠিক তাই ঘটছে এবং ঘটবে। আর এসব কিছুর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞান, ঐশ্বরিক ইচ্ছা, পরিকল্পনা এবং যা কিছু ঘটে তার উপর নিয়ন্ত্রণের প্রতি রয়েছে মুসলিমদের পূর্ণ বিশ্বাস।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাদের মৃত্যূর পর যে আরেকটি জীবন আছে, তার প্রতি বিশ্বাস রাখে। মুসলিমরা বিশ্বার করে যে, মৃত্যূর পরে আরেকটি জীবন আছে, যেটি অনন্তকাল অর্থাৎ যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। এমন একটি জীবন আছে সেখানে। মানুষের দুনিয়াবী কর্মফলের আলোকে সেই জীবনের সুখ-দুঃখ নির্ধারিত হবে। যারা ভাল কাজ করবে, প্রভূর হুকুম-আহকাম মেনে চলবে, তাদের পরকালীন জীবন সুখময় হবে। আর যারা দুনিয়াতে খারাপ কাজ করবে এবং প্রভূর হুকুম-আহকাম মেনে চলবে না, তাদের পরকালীন জীবন কষ্টের ও দুঃখময় হবে।
# আক্বীদার গুরুত্ব:
মানবজীবনে আক্কীদাহর গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, যার আক্কীদা বিশুদ্ধ নয়, তার আমলও বিশুদ্ধ নয়। পরকালীন জীবনে মুক্তির পুরস্কার পেতে হলে প্রথমে আক্কীদা বিশুদ্ধ করতে হবে। কেবল বিশ্বাস ও আমলগত দিক ছাড়াও বাস্তবিক জীবনেও আক্কীদাহর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-
(১) আধ্যাত্মিক স্থিতিশীলতা: এটি মুসলমানদের একটি সুস্পষ্ট বিশ্বদৃষ্টি এবং মহাবিশ্বে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা প্রদান করে।
(২) নৈতিক নির্দেশনা: আক্বীদা মানবজাতির নৈতিক আচরণ এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি স্থাপন করে, কারণ তাদের কর্মগুলি উদ্দেশ্য এবং ঐশ্বরিক নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে বিচার করা হয়।
(৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য: একটি সাধারণ বিশ্বাস বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যকে উৎসাহিত করে। একইসাথে জাতিগত, সাংস্কৃতিক, আঞ্চলিক এবং ভাষাগত পার্থক্যকে অতিক্রম করে।
# উপসংহার:
একটি সুদৃঢ় ও বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বীদা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। এটি ঈমানের ভিত্তি এবং সমস্ত ইবাদত এবং নৈতিক আচরণের সূচনা বিন্দু। জ্ঞান, প্রতিফলন এবং অনুশীলনের মাধ্যমে আক্বীদাকে শক্তিশালী করা ইসলামে একটি জীবনব্যাপী যাত্রা, কোন মানুষকে তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের চুড়ান্ত সফলতার দিকে ধাবিত করে।
Frequently Asked Questions
প্রশ্ন: ইসলামী আক্কীদা বলতে কি বুঝ?
উত্তর: ইসলামী আক্কীদা বলতে এমন সব মূল বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা ও মতবাদগুলিকে বোঝায়, যা কোন মুসলিমের বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করে।
প্রশ্ন: ঈমানের মূল ভিত্তি কয়টি ও কি কি?
উত্তর: ঈমানের মূল ভিত্তি সাতটি। যেমন- (১) আল্লাহর প্রতি ঈমান, (২) ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান, (৩) আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, (৪) নবী ও রাসুলগণের প্রতি ঈমান, (৫) আখিরাতের প্রতি ঈমান, (৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান, ও (৭) মৃত্যূর পর পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান।
প্রশ্ন: মানবজীবনে বিশুদ্ধ আক্কীদার গুরুত্ব কি?
উত্তর: বিশুদ্ধ আক্কীদা ব্যতীত কেউ বিশুদ্ধ মুসলিম হতে পারে না। আক্কীদা বিশুদ্ধ তো তার আমল বিশুদ্ধ (আক্কীদাগত দিক থেকে)। আর যার আমল বিশুদ্ধ, সে মহান আল্লাহ নিকট থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত হবেন।
প্রশ্ন: ভ্রান্ত আক্কীদার কুফল কি?
উত্তর: ভ্রান্ত আক্কীদা পোষণকারী তার ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় শিরক ও কুফরে লিপ্ত হয়ে পরে। তাই ভ্রান্ত আক্কীদা পোষণকারী কখনো মহান আল্লাহর প্রিয়া বান্দা হতে পারবে না। আর যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবে না, তার পরকালীন জীবনে কষ্টের সীমা থাকবে না।
পোস্ট ট্যাগ: আক্কীদা, ইসলামী আকিদা কি?, আকীদার গুরুত্ব, সহীহ আকীদা, Islamic Creed, Islami Aqedah
আরো ইসলামীক পোস্ট পেতে নিচের লেখাগুলি লক্ষ্য করুন-
১।
২।
৩।
No comments