Header Ads

Header ADS

ফৌজদারি অপরাধ এবং প্রতিকারের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন | A Brief Report on Criminal Offenses and Remedies | Legal Relief


বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ফৌজদারী কার্যবিধি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনের আলোকে ফৌজদারি অপরাধ এবং প্রতিকারের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন | A Brief Report on Criminal Offenses and Remedies in the Light of the Penal Code, the Code of Criminal Procedure, and Other Relevant Laws of Bangladesh.

 

ভূমিকা:

ফৌজদারী অপরাধের প্রতিকার নিয়ে লেখা এই প্রতিবেদনটি দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (The Penal Code - 1860), ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure-1898) এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান ও কার্যকর রয়েছে এমন অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনের আলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ফৌজদারি অপরাধসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ও তার সাথে অপরাধের প্রতিকার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে উল্লিখিত অপরাধসমূহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন অধ্যায় থেকে সংকলিত হয়েছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সুস্পষ্ট ও ধারাবাহিক কাঠামোয় উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

💁পূর্ববর্তী পোস্ট পড়তে ভিজিট করুন:

Ø 👉ফৌজদারি অপরাধ সমূহের প্রাথমিক ধারণা।

 

ফৌজদারি অপরাধের তালিকা ও প্রতিকার:

এ পর্যায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৯৬০, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী অপরাধের প্রতিকারগুলো নিচে ক্রমিক অনুসারে সাজিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হলো।


১. মানবদেহের (মানুষের শরীরের) সাথে সম্পর্কিত অপরাধসমূহ (Crimes or Offences Affecting the Human Body):


১.১. খুন (Murder - ধারা ৩০০):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোনো ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্বজ্ঞানে, সুস্থাবস্থায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা।

👉প্রতিকার:

এই অপরাধের জন্য বাংলাদেশের আইনে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে মামলা দায়ের করতে পারে। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুগ শাস্তি প্রদান করা হয়।

 

১.২. দণ্ডনীয় নরহত্যা বা কালপাবল হোমিসাইড (Culpable Homicide - ধারা ২৯৯):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে বা কারো মৃত্যু হতে পারে জেনে এমন কোনো কাজ করা, যা সাধারণত আইন অনুযায়ী খুন হিসেবে গণ্য হয় না।

👉প্রতিকার:

এই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে মামলা দায়ের করতে পারে। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া খুনের মতোই, তবে শাস্তি অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে।

 

১.৩. আ|ঘা|ত ও গুরুতর আ|ঘা|ত (Hurt & Grievous Hurt - ধারা ৩১৯ ও ৩২০):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কাউকে শারীরিক যন্ত্রণা দেওয়া 'আঘাত', এবং হাড় ভেঙে যাওয়া বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার মতো গুরুতর ক্ষতি 'গুরুতর আঘাত' হিসেবে গণ্য হয়।

👉প্রতিকার:

সাধারণ আঘাতের জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৩২৩)। গুরুতর আঘাতের জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৩২৫)। ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় এজাহার দায়ের করতে পারে এবং পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্তকে বিচারের সম্মুখীন করে।

 

১.৪. অপহরণ (Apaharan) বা বলপূর্বক অপহরণ (Kidnapping or Abduction - ধারা ৩৬০-৩৬২):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

আইনসম্মত অভিভাবকের কাছ থেকে কোনো নাবালককে বা কোনো ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া।

👉প্রতিকার:

অপহরণের জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৩৬৩)। অপহরণের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে শাস্তির ভিন্নতা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে (ধারা ৩৬৪)। ভুক্তভোগী বা তার পরিবার থানায় মামলা দায়ের করতে পারে।

 

.৫. ধর্ষণ (Rape - ধারা ৩৭৫):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা বিনা সম্মতিতে জোর পূর্বক বা ভয় দেখিয়ে সম্মতি আদায় করে তার সাথে যৌন সঙ্গম করা।

👉প্রতিকার:

ধর্ষণের জন্য বাংলাদেশের আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়। মেডিকেল পরীক্ষা ও অন্যান্য তদন্তের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

১.৬. যৌতুকের কারণে নির্যাতন বা হত্যা (Dowry-related Torture or Death):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

যৌতুকের জন্য বা যৌতুকের দাবিতে কোনো বিবাহিত নারীকে নির্যাতন করা বা গুরুতর আঘাত করা কিংবা হত্যা করা।

👉প্রতিকার:

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০)। যৌতুকের কারণে মৃত্যু ঘটানো হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ভুক্তভোগী বা তার পরিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে পারে।

 

২. সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ (Offences Against Property):


২.১. চুরি (Theft - ধারা ৩৭৮):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোনো ব্যক্তির দখল বা নিয়ন্ত্রণ থেকে/হতে তার সম্মতি ছাড়া বা অনুমতি ছাড়া কোনো অস্থাবর সম্পত্তি অসাধুভাবে নিয়ে যাওয়া বা হস্তগত করা।

👉প্রতিকার:

চুরির অপরাধের জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৩৭৯)। চুরি করা সম্পত্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে শাস্তির মেয়াদ বাড়তে পারে। সম্পত্তির মালিক থানায় এজাহার দায়ের করতে পারে।

 

২.২. বলপূর্বক গ্রহণ বা চাঁদাবাজি (Extortion - ধারা ৩৮৩):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোনো ব্যক্তিকে (ক্ষমতা ও বাহুশক্তির) ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান বস্তু আদায় করা।

👉প্রতিকার:

চাঁদাবাজির জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৩৮৪)। ভয় দেখানোর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে শাস্তির মেয়াদ বাড়তে পারে। ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারে।

 

২.৩. দ|স্যু|তা ও ডা|কা|তি (Robbery & Dacoity - ধারা ৩৯০ ও ৩৯১):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

চুরি বা চাঁদাবাজির সময় যদি মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখানো হয়, তবে তা 'দস্যুতা'। পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি একসাথে দস্যুতা করলে তাকে 'ডাকাতি' বলা হয়।

👉প্রতিকার:

দস্যুতার জন্য দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৩৯২)। ডাকাতির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৩৯৫)। দস্যুতা বা ডাকাতির সময় খুন করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৩৯৬)।

 

২.৪. (অপরাধমূলক) সম্পত্তি আত্মসাৎ (Criminal Misappropriation of Property - ধারা ৪০৩):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

অসৎ বা খারাপ উদ্দেশ্যে কোনো অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাৎ করা বা নিজের ব্যবহারে লাগানো।

👉প্রতিকার:

সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৪০৩)। ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে।

 

২.৫. প্রতারণা (Cheating - ধারা ৪১৫):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কাউকে ধোঁকা দিয়ে বা কাউকে ছলনা করে কোনো সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করা বা এমন কোনো কাজ করানো যা তার জন্য ক্ষতিকর।

👉প্রতিকার:

প্রতারণার জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৪১৭)। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে শাস্তির মেয়াদ বাড়তে পারে (ধারা ৪২০)। ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে।

 

৩. রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ (Crimes or Offences Against the State):


৩.১. রাষ্ট্রদ্রোহিতা (Sedition - ধারা ১২৪ক):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কথা (মুখে উচ্চারণ করে বলা), লেখা (যে কোন পদ্ধতিতে লেখা বা মূদ্রণ) বা ইঙ্গিতের (যে কোন ধরণের ইশারা বা ইঙ্গিত) মাধ্যমে আইনসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা বা করার চেষ্টা করা।

👉প্রতিকার:

রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা দায়ের করা হতে পারে।

 

৩.২. সরকার (আইনসম্মত ও বৈধ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা (Waging war against the Government - ধারা ১২১):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বা করার চেষ্টা করা বা ঘোষণা করা।

👉প্রতিকার:

এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

৪. গণশৃঙ্খলা ও জনশান্তি বিরোধী অপরাধ (Crimes or Offences Against Public Tranquility):


৪.১. দাঙ্গা (Rioting - ধারা ১৪৭):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

বেআইনি সমাবেশ এর কোনো সদস্য যদি সহিংসতা প্রদর্শন করে বা বলপ্রয়োগ করে।

👉প্রতিকার:

দাঙ্গার জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

 

৪.২. বেআইনি সমাবেশ (Beaini Somabesh) বা বেআইনি জমায়েত (Unlawful Assembly - ধারা ১৪১):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

পাঁচ বা পাঁচের অধিক ব্যক্তি যদি কোনো সাধারণ অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে কোথাও একত্রিত হয়।

👉প্রতিকার:

বেআইনি সমাবেশের সদস্য হওয়ার জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ১৪৩)।

 

৫. মানহানি (Defamation - ধারা ৪৯৯):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

কোনো ব্যক্তির সম্মানহানি বা সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার সম্পর্কে মিথ্যা, বানোয়াট ও ক্ষতিকর কিছু বলা, লেখা, অঙ্কন করা বা প্রকাশ করা।

👉প্রতিকার:

মানহানির জন্য দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে (ধারা ৫০০)। ভুক্তভোগী আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে।

 

৬. জালিয়াতির সাথে সম্পর্কিত অপরাধসমূহ (Offences or Crimes Relating to Forgery):


৬.১. জালিয়াতি (Forgery - ধারা ৪৬৩):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে কোনো মিথ্যা দলিল বা ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করা।

👉প্রতিকার:

জালিয়াতির উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে শাস্তির ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণ জালিয়াতির জন্য দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৪৬৫)। মূল্যবান দলিল জাল করলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে (ধারা ৪৬৭)।

 

৬.২. জাল নোট (টাকা) বা জাল মুদ্রা তৈরি (Counterfeiting Coin/Currency - ধারা ২৩১-২৪৩):

👉সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

নকল টাকা বা জাল নোট, অথবা মুদ্রা তৈরি করা বা জেনেশুনে ব্যবহার করা।

👉প্রতিকার:

জাল নোট বা মুদ্রা তৈরির অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

উপসংহার:

এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির অধীনে প্রধান কয়েকটি ফৌজদারি অপরাধের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এবং সেগুলোর প্রতিকারের প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হলো। প্রতিটি অপরাধের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়া ও শাস্তির বিধান রয়েছে, যা ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। এই তথ্য সাধারণ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপস্থাপিত, এবং কোনো আইনি পরামর্শের বিকল্প হিসেবে গণ্য হবে না। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।

 

🔑পোস্ট কি-ওয়ার্ড:

বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন ও প্রতিকার | Criminal Law and Remedies in Bangladesh | দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি | Punishment for Crimes under Penal Code 1860 | সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ ও আইন | Property Related Offenses and Law | খুন ও নরহত্যার আইনি প্রতিকার | Legal Remedies for Murder and Culpable Homicide | চুরি, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির শাস্তি | Punishment for Theft, Dacoity, and Extortion | নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন | Women and Children Repression Prevention Act | যৌতুক আইনের অধীনে সুরক্ষা | Protection under Dowry Law | মানহানি মামলার আইন ও শাস্তি | Defamation Law and Punishment | জালিয়াতি ও প্রতারণার প্রতিকার | Remedies for Forgery and Cheating | রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের ধারা ও শাস্তি | Sedition Law Sections and Punishment |

 

প্রশ্নোত্তর পর্ব

প্রশ্ন ১: দণ্ডবিধি অনুযায়ী খুন এবং দণ্ডনীয় নরহত্যার মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

উত্তর: খুন (ধারা ৩০০) হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাউকে হত্যা করা। অন্যদিকে, দণ্ডনীয় নরহত্যা (ধারা ২৯৯) হলো মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে বা মৃত্যু হতে পারে জেনে এমন কোনো কাজ করা, যা আইনত খুন হিসেবে গণ্য হয় না। খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, যেখানে দণ্ডনীয় নরহত্যার শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম।

 

প্রশ্ন ২: চুরি এবং ডাকাতির মধ্যে আইনগতভাবে কীভাবে পার্থক্য করা হয়?

উত্তর: কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার অস্থাবর সম্পত্তি অসাধুভাবে নিয়ে যাওয়াকে চুরি (ধারা ৩৭৮) বলে। অন্যদিকে, পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি যখন একত্রিত হয়ে চুরি বা চাঁদাবাজির সময় মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখায়, তখন তাকে ডাকাতি (ধারা ৩৯১) বলা হয়। সদস্য সংখ্যা এবং সহিংসতার ব্যবহারই এদের মধ্যে মূল পার্থক্য।

 

প্রশ্ন ৩: যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হলে ভুক্তভোগীর জন্য কী ধরনের আইনি প্রতিকার রয়েছে?

উত্তর: যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হলে "নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০" এর অধীনে মামলা করা যায়। এই অপরাধের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি নির্যাতনের ফলে মৃত্যু ঘটে, তবে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

 

প্রশ্ন ৪: প্রতারণার (Cheating) অপরাধের জন্য কী শাস্তি নির্ধারিত আছে?

উত্তর: দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় সংজ্ঞায়িত প্রতারণার জন্য ৪১৭ ধারা অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির পরিমাণ ও গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে শাস্তির মেয়াদ বাড়তে পারে।

 

প্রশ্ন ৫: মানহানি (Defamation) বলতে কী বোঝানো হয়েছে এবং এর শাস্তি কী?

উত্তর: কোনো ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার সম্পর্কে মিথ্যা ও ক্ষতিকর কিছু বলা, লেখা বা প্রকাশ করাকে মানহানি (ধারা ৪৯৯) বলে। এই অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির ৫০০ ধারা অনুযায়ী দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

 

প্রশ্ন ৬: রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ কী এবং এর জন্য কী শাস্তি হতে পারে?

উত্তর: আইনসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি কথা, লেখা বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা বা করার চেষ্টাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা (ধারা ১২৪ক) বলে। এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।

 

প্রশ্ন ৭: সাধারণ আঘাত এবং গুরুতর আঘাতের মধ্যে শাস্তির কী পার্থক্য রয়েছে?

উত্তর: সাধারণ আঘাতের (ধারা ৩২৩) জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু যদি আঘাত গুরুতর হয়, যেমন—হাড় ভেঙে যাওয়া বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া (ধারা ৩২৫), সেক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।


আরো পোস্ট পড়তে ভিজিট করুন-

১.

২.

৩.


No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.