Header Ads

Header ADS

বরিশাল বিভাগের মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান | Enchanting Tourist Spots of Barisal Division

বরিশাল বিভাগ


বরিশাল বিভাগের মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান | Enchanting Tourist Spots of Barisal Division:

 উপস্থাপনা:

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বরিশাল বিভাগ। ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিত এই বিভাগ নদী-নালা, খাল-বিল এবং সবুজ শ্যামলিমায় পরিপূর্ণ এক অপরূপ ভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। নিম্নে বরিশাল বিভাগের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে এই তথ্যবহুল নিবন্ধটি আলোকপাত করা হলো।

১. বরিশাল জেলা | Barisal District | বাংলার ভেনিস:

বরিশাল জেলা কে বলা হয় "বাংলার ভেনিস"। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই জেলাটি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনার কারণে পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

💞গুঠিয়া মসজিদ: বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এই মসজিদ কমপ্লেক্স এর লেক, মিনার এবং সুসজ্জিত বাগান পর্যটকদের জন্য এক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপস্থাপন করে।

💞 দুর্গাসাগর দীঘি: জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সুবিশাল এই দীঘিটি ১৭৮০ সালে বিখ্যাত রাজা শিব নারায়ণ খনন করান। দুর্গাসাগরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।

💞লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি: বরিশাল জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়িটি আজো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় এবং দেশীয় রীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে।

💞ভাসমান পেয়ারা বাজার: বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই ভাসমান পেয়ারা বাজারটি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান সংলগ্ন এক অনন্য স্থান। বিশেষ করে পেয়ারার মৌসুমে শত শত নৌকায় সবুজ পেয়ারার সমারোহ এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করে।

💞অক্সফোর্ড মিশন চার্চ: বরিশাল জেলা শহরের বগুড়া রোডে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই গির্জা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ। এটি একটি স্থাপত্য বিস্ময়। এর লাল ইটের নয়নাভিরাম স্থাপত্য পর্যটকদের সত্যিই আকর্ষণ করে।

💞বিবির পুকুর: বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিবির পুকুর। জানা যায়, ঐতিহাসিক এই পুকুরটি ১৯০৮ সালে জিন্নাত বিবি খনন করান। বর্তমানে এটি শহরের  অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

২. ভোলা জেলা | Bhola District | বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা:

বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং এর নয়নাভিরাম চরাঞ্চল ও দ্বীপগুলো পর্যটকদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণ।

💞মনপুরা দ্বীপ: ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ৮০ (আশি) কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানকার হরিণের পাল, ম্যানগ্রোভ বন এবং নিরিবিলি সৈকত পর্যটকদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।

💞চর কুকরি-মুকরি: বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এই চরটি মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত। এখানকার ম্যানগ্রোভ বন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং শান্ত পরিবেশ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ।

💞জ্যাকব টাওয়ার: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম এই জ্যাকব টাওয়ার। ১৭ তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ এই টাওয়ার থেকে বাইনোকুলারের মাধ্যমে টাওয়ারের চারপাশের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটা দর্শকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।

💞তারুয়া সমুদ্র সৈকত: চরফ্যাশন উপজেলার অধীন ঢালচরের দক্ষিণে অবস্থিত প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতটি তার শান্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য পরিচিত। এটি বর্তমানে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

৩. পটুয়াখালী জেলা | Patuakhali District | সাগরকন্যা:

বাংলাদেশের "সাগরকন্যা" হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালী জেলা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। এছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। যেমন-

💞কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতের আরেক নাম ‘সাগরকন্যা’। এটি এক অনন্য সমুদ্র সৈকত, যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই উপভোগ করা যায়। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

💞ফাতরার চর: কুয়াকাটার পশ্চিমে অবস্থিত এই চরটি বাংলার "দ্বিতীয় সুন্দরবন" নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

💞সীমা বৌদ্ধ মন্দির: সাগরকন্যা কুয়াকাটা হতে ৮ (আট) কিলোমিটার দূরে মিশ্রিপাড়ায় মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরে দেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তিগুলোর একটি সংরক্ষিত রয়েছে। এটি সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীনতম নিদর্শন।

💞রাখাইন পল্লী: কুয়াকাটার কাছেই রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের বসবাসের স্থান রাখাইন পল্লী নামে পরিচিত। সেখানে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও জীবনধারা দেখার সুযোগ মেলে। এখানকার তাঁতপণ্য পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

. পিরোজপুর জেলা | Perojpur District | প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান:

নদী-নালা ও সবুজে ঘেরা পিরোজপুর জেলায় রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান।

💞রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি: প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়িটি পিরোজপুরের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি বর্তমানে পর্যটকদের কাছে বেশ দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

💞ভাসমান পেয়ারা বাজার (আটঘর, কুড়িয়ানা): পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর ও কুড়িয়ানার ভাসমান পেয়ারা বাজারও পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। পেয়ারা ক্রেতাদের পাশাপাশি এখানে অনেক দর্শকের দেখা মেলে।

💞কবি আহসান হাবিবের বাড়ি: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সুপরিচিত কবি আহসান হাবিবের পৈতৃক ভিটা শংকরপাশা গ্রামে অবস্থিত। এটি বর্তমানে সাহিত্য ও কবি প্রেমীদের কাছে অনন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

💞ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক: পরিবার ও শিশুদের দৈনন্দিন বিনোদনের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্থান। এখানে প্রত্যহ অসংখ্য পরিবার ও শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যায়।

৫. বরগুনা জেলা | Barguna District | বাংলার বনভূমি ও রাখাইন সংস্কৃতির স্থান:

বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বরগুনা জেলা তার সমুদ্র সৈকত, বনভূমি এবং রাখাইন সংস্কৃতির জন্য পরিচিত।

💞শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত: বরগুনার তালতলী উপজেলার এই সৈকতটি পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় অবস্থিত। এর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

💞হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র: হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র মূলত সুন্দরবনের একটি অংশ। এই অংশে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যায়। এটি বর্তমানে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

💞বিবিচিনি শাহী মসজিদ: বরগুনার বেতাগী উপজেলায় অবস্থিত মোঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক ও প্রাচীন স্থাপনা। নামাজীদের পাশাপাশি অনেক পর্যটন মসজিদ টি দেখতে আসেন।

💞রাখাইন পল্লী: তালতলী উপজেলায়ও রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে, যেখানে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়। এটিও রাখাইন পল্লী নামে পরিচিত।

৬. ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের পূন্যভূমি:

 ছোট কিন্তু ঐতিহাসিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ ঝালকাঠি জেলায় রয়েছে বেশ কিছু পুরোনো স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান।

💞কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি: ঝালকাঠি সদর উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটিও বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

💞গাবখান সেতু: বাংলাদেশের উচ্চতম সেতুগুলোর একটি গাবখান সেতু। এই সেতু থেকে সুগন্ধা নদীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। প্রত্যহ বিকেলে অসংখ্য পর্যটকের এই সেতু থেকে দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় করতে দেখা যায়।

💞ভাসমান পেয়ারা বাজার (ভীমরুলী): ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলীর ভাসমান পেয়ারা বাজারটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ক্রেতাদের পাশাপাশি এখানে অসংখ্য দর্শক বেড়াতে আসেন।

💞সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় অবস্থিত প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো এই বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক ও প্রাচীন নিদর্শন।

শেষ কথা:

বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলাই তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের স্বাগত জানায়। সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

পোস্ট কিওয়ার্ড | Post Keyword:

বরিশাল বিভাগের দর্শনীয় স্থান | বরিশাল ভ্রমণ | বাংলার ভেনিস বরিশাল | ভাসমান পেয়ারা বাজার | সাগরকন্যা কুয়াকাটা | মনপুরা দ্বীপ | চর কুকরি-মুকরি | বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা ভোলা

প্রশ্নোত্তর | FAQ

প্রশ্ন ১: ‘বাংলার ভেনিস’ বলা হয় কোন জেলাকে?
উত্তর: বরিশাল জেলাকে "বাংলার ভেনিস" বলা হয়।
 
প্রশ্ন ২: এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গির্জা কোনটি এবং এটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গির্জা হলো অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, যা বরিশাল জেলা শহরের বগুড়া রোডে অবস্থিত।
 
প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলার নাম কী?
উত্তর: বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলার নাম ভোলা।
 
প্রশ্ন ৪: ‘সাগরকন্যা’ নামে পরিচিত কোন জেলা এবং কেন?
উত্তর: পটুয়াখালী জেলা ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। এই জেলায় অবস্থিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জন্য এটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।
 
প্রশ্ন ৫: কোন সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই উপভোগ করা যায়?
উত্তর: পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই উপভোগ করা যায়।
 
প্রশ্ন ৬: ভাসমান পেয়ারা বাজার কোথায় কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: প্রতিবেদন অনুসারে, বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায়, বিশেষ করে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর ও কুড়িয়ানা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভীমরুলীতে ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখা যায়।
 
প্রশ্ন ৭: উপমহাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ‘জ্যাকব টাওয়ার’ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: জ্যাকব টাওয়ার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত।
১.
২.
৩.

আরো পড়ুন-

No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.