Header Ads

Header ADS

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ায় পরিবর্তনের সুর: শতাংশের হিসাব প্রস্তাবনায় নতুন আশা | Financial composition of house rent in percentage

 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ায় পরিবর্তনের সুর: শতাংশের হিসাব প্রস্তাবনায় নতুন আশা:

 

ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। নামমাত্র নির্দিষ্ট অঙ্কের পরিবর্তে মূল বেতনের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের জন্য হিসেবের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবনাটিতে বর্ণিত ধাপগুলির সর্বোচ্চ সুবিধার ধাপ বাস্তবায়িত হলে তা দেশের কয়েক লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীর জীবনযাত্রার মানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

 

সম্প্রতি মাউশি কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এক প্রস্তাবনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য একাধিক হারে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মূল বেতনের ৫%, ১০%, ১৫% এবং ২০% হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংশ্লেষের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। হিসেবে এই সংশ্লেষটি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

 

বর্তমান পরিস্থিতি ও দীর্ঘদিনের দাবি :

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পেলেও বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসিক মাত্র ১,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে এই ভাতা নিতান্তই অপ্রতুল বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন শিক্ষক সংগঠনগুলো। বিশেষ করে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য এই টাকায় বাসা ভাড়া তো দূরের কথা, বাসস্থানের ন্যূনতম ব্যয় নির্বাহ করাও প্রায় অসম্ভব

 

এই প্রেক্ষাপটে, সামপ্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের দাবিটি শিক্ষক সমাজের অন্যতম প্রধান দাবিতে পরিণত হয়েছিল। এই দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো সমাবেশ, মানববন্ধন এবং কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিও পালন করেছে। গত আগস্ট মাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মহাসমাবেশ থেকে শিক্ষকরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকেই শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সম্মত হয় এবং এর ভিত্তিতেই মাউশিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়।

 

প্রস্তাবনার আর্থিক বিশ্লেষণ :

মাউশি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবনায় বিভিন্ন হারের বিপরীতে সরকারের সম্ভাব্য বার্ষিক ব্যয়ের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কেবলমাত্র স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যই যদি ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া কার্যকর করা হয়, তাহলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকা, যা প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমান।

 

প্রস্তাবিত সারণী অনুযায়ী, বর্তমানে বেসরকারি স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে মোট ৮৬৯.৫২ কোটি টাকা বাৎসরিক বাড়ি ভাড়া প্রদান করা হয়। যদি ২০% হারে নতুন ভাড়া কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২০৬১.১৫ কোটি টাকা। একইভাবে ১৫% হারের জন্য ১৮১৭.৮৭ কোটি টাকা, ১০% হারের জন্য ১৫২৭.৬৭ কোটি টাকা এবং ৫% হারের জন্য ১২৩৮.২৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এই বিশাল আর্থিক সংশ্লেষের কারণেই বিষয়টি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল

 

শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া :

মাউশির এই প্রস্তাবনাকে শিক্ষক সমাজ ইতিবাচকভাবেই দেখছে। শিক্ষক নেতারা মনে করছেন, এটি তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের একটি প্রাথমিক বিজয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতারা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অঙ্কের পরিবর্তে শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া প্রদান করা হলে তা কেবল শিক্ষকদের আর্থিক সমস্যারই সুরাহা করবে না, বরং সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমাতেও সাহায্য করবে। শতাংশের নিয়ম চালু হলে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই ভাতার পরিমাণও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, যা শিক্ষকদের জন্য একটি স্থায়ী আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

 

তবে, কোন হারে এটি চুড়ান্ত অনুমোদিত হবে তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কিছুটা সংশয়ও রয়েছে। তাদের দাবি, কোনো ধরনের কাটছাঁট না করে ২০ শতাংশ হারেই যেন বাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়। দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূরীকরণ ও শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নীতকরণার্থে ২০ শতাংশের কোন বিকল্প নেই। সরকারের সক্ষমতার কথা চিন্তা করেই শিক্ষক নেতারা কেবল ২০ শতাংশের প্রস্তাব রেখেছেন। কারণ তাদের মূল দাবি বেসিকের ৪৫ শতাংশ। তাই এ কোন ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষক সমাজ পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্ম বিরতি সহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করে যাবে। সেই সাথে ৪৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবি তখন আরো বেশি জোড়ালো হবে। এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তার দায়ভার সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরগুলিকে নিতে হবে।

 

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ :

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির এই উদ্যোগকে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং শিক্ষার সার্বিক গুণগত মান বৃদ্ধি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। মাউশি থেকে প্রস্তাবনা পাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এটি পর্যালোচনা করছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও একই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর একটি সমন্বিত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে

 

তবে, উপরোল্লিখিত অর্থের জোগান দেওয়াই হবে সরকারের জন্য এক ধরণের চ্যালেঞ্জ। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও, শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া চালুর বিষয়টি যে এখন নীতি নির্ধারণী আলোচনার টেবিলে পৌঁছেছে, তাতেই আশাবাদী সারাদেশের কয়েক লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা নিঃসন্দেহে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এবং শিক্ষকদের পেশাগত সন্তুষ্টি ও মনোবল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে


বস্তনিষ্ঠ সংবাদের বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ওয়েব পোর্টাল - https://www.cityofknowledge-en.com/


Like/Follow and Share করে আমাদের পেইজ এর সঙ্গেই থাকুন।


প্রশ্নোত্তর পর্ব | FAQ

প্রশ্ন ১: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন প্রস্তাবনাটি কী?

উত্তর: নতুন প্রস্তাবনাটি হলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বর্তমানে প্রচলিত নির্দিষ্ট ১,০০০ টাকার পরিবর্তে তাদের মূল বেতনের উপর ভিত্তি করে শতাংশ হারে (৫%, ১০%, ১৫% বা ২০%) বাড়ি ভাড়া প্রদান করা

 

প্রশ্ন ২: এই প্রস্তাবনাটি কে এবং কাকে পাঠিয়েছে?

উত্তর: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এই হিসেবের প্রস্তাবনাটি তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে

 

প্রশ্ন ৩: বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ কত টাকা পান?

উত্তর: বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসিক মাত্র ১,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন

 

প্রশ্ন ৪: প্রস্তাবনার সর্বোচ্চ হার (২০%) বাস্তবায়িত হলে সরকারের অতিরিক্ত কত টাকা ব্যয় হবে?

উত্তর: প্রস্তাবনার সর্বোচ্চ ২০% হার শুধুমাত্র স্কুল ও কলেজের জন্য কার্যকর করা হলে সরকারের বাৎসরিক অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ২,৪০০ কোটি টাকা

 

প্রশ্ন ৫: মাউশির এই প্রস্তাবনার বিষয়ে শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া কী?

উত্তর: শিক্ষক সমাজ এই প্রস্তাবনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং এটিকে তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের একটি প্রাথমিক বিজয় বলে মনে করছে। তারা মনে করে, এটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা দেবে

 

প্রশ্ন ৬: শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়ার হার ন্যূনতম কত শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন?

উত্তর: শিক্ষক সংগঠনগুলো কোনো ধরনের কাটছাঁট ছাড়া ন্যূনতম ২০ শতাংশ হারেই বাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছে

 

প্রশ্ন ৭: শিক্ষকদের ২০ শতাংশের দাবি পূরণ না হলে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

উত্তর: প্রতিবেদনে শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০ শতাংশের দাবি পূরণ না হলে তারা কর্মবিরতিসহ লাগাতার কর্মসূচিতে যাবেন এবং তখন তাদের মূল দাবি, অর্থাৎ বেসিকের ৪৫ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন

 

প্রশ্ন ৮: এই প্রস্তাবনা অনুমোদনের পরবর্তী ধাপগুলো কী কী?

উত্তর: মাউশির প্রস্তাবনাটি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করবে। এরপর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও একই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে একটি সমন্বিত প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে

 

 পোস্ট কি-ওয়ার্ড | Post Keyword :

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি | MPO teachers house rent allowance | শিক্ষকদের নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ | মাউশির নতুন প্রস্তাবনা | এমপিও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য | শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া | বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া | শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত | MPO shikkhok beten 2025 | শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবি


আরো পড়ুন-

বাড়ি ভাড়া নিয়ে উৎকণ্ঠা ও বৈষম্যের অভিযোগ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদেরও।


No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.